বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৪

আলতো করে পাতো কান / আমির হামজা



শব্দের বাঁকা পথ জানান দেবে
গভীরতা কত
শুধু একটু টোকা দাও
কান পেতে শুনো —প্রতিধ্বনি

সিঁথি টানা 
সোনামুখি ধানগাছ —উত্তর দক্ষিণে দোলন
উন্মাদ বকের গাম বুট খুমির ঘাঁটে 
ডিঙাগাড়ির পেটে তালপাতা 
নিচে তার পাখনা, শুড়, পুচ্ছ।

রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪

ভোর / অমৃতা খেটো

শেষ রাতে মৃদু ঢেউ ওঠে
নবীন পাতারা ওই শঙ্খচূর্ণ ভোরে
উলুধ্বনি দেয় -
ঘুমের কালরাত্রি কেটে যায় সুরে সুরে

টুপটাপ হিজলের ফুল ঝরে পড়ে
সুগন্ধি মেখে নেয় জল
প্রসাধনপ্রিয় এই সরোবরে স্নান সারে
চিত্রিনী হরিণীরা --
ভোরের বাতাস আল্পনা এঁকে দেয়
কবির দোমেটে ঘরের উঠোনে
কবি লিখে রাখেন
দু একটি চরণ
কবি তো দার্শনিক
কাব্যরসে জারিত হতে চান..


সমাধি / সন্তু মুখোপাধ্যায়

যে জন্ম নেয় এইমাত্র 
তার নাভিতে লেগে -
ছিন্নমূল ভালবাসার চিহ্ণ। 
হাতগুলো জঠরের রক্ত মেখে
ছুঁয়ে ফেলে সীমান্তের প্রহর
পরিখার গণ্ডি আঁকার সময়
তিন'ফুট ছেড়েছিল বোধহয়
একটা সমাধির জন্য ! 

সলিলসমাধি / বিশ্বজিৎ সাঁতরা

মাঝে মাঝে খুব জোরে চিৎকার করতে ইচ্ছে হয়
মনে হয় সবাইকে বলি-
মনের ইতিকথা।
কিভাবে জ্বলছে অলিন্দ নিলয় 
তাই কেউ জানবে না! 
কেউ জানতেও পারবে না হৃদয়ে
ঘটে যাওয়া কুরুক্ষেত্রের কাহিনি

শুধু অপেক্ষা সেই মহাপ্রলয়ের 
যেদিন শরীর নামের এই বিশাল অট্টালিকা
সবার অলক্ষ্যে সলিলসমাধি হবে।।
                                              

স্বপ্নলিপি / শুভঙ্কর দাস



স্বপ্নখচিত,উৎকীর্ণ লিপি,অপরিচিতা?

সুন্দরের হাতে সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র 
তার নিচে মাথা নত করে বসে আছে
কবি এবং কাব্যের প্রতিটি পাতা...

কৃপা,অমরত্বের অলিখিত স্পর্শ, সঙ্গ,ঘাম... 

লন্ডনের কুমারী বৃষ্টি নন্দীগ্রামের অজপাড়াগাঁয় প্রেমে হতে চায় বাইজানটিয়াম...

শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪

মেয়েটির নাম শীত / খুকু ভূঞ্যা


আঁচলে কয়েক মুঠো  মুড়ি বেঁধে মেয়েটি হাঁটছে সর্ষে খেতের দিকে
শিশিরে ধুয়ে যায় লক্ষ্মী বারের আলতা
লাল হয়ে ওঠে কেসুতি ফুল

ভাবছি কেন এই যাত্রা
শস্যের পর শস্য কাটার ভীড়
বিল শামুক গেঁড়িতে পায়ের পাতা ফালা ফালা করে
গোলা ভরানোর সাধ স্বপ্ন
কেন সে পালায় না যেখানে দোকানের মতো সাজানো রয়েছে সুখ
শরীর কুসুমের সৌরিন ছড়িয়ে লুটে নেয় না আজ কাল পরশুর তৃষ্ণাজল
কেন খড়ের চালায় এত ফেরার টান

আপনি কখনো এ নারীকে ভালোবাসতে পারেন না
 হাঁটতে হাঁটতে কখন তার বুক থেকে সরে গেছে আঁচল
 সর্ষে ফুলের মত স্তন মেখে নিয়েছে এক আঙুল রোদ
 বাঘচোখ শুষে নিয়েছে তার ঋতু রক্ত বসন্ত

মেয়েটির নাম শীত
শরীরময় কুয়াশা নিয়ে সে হাঁটছে কবরডাঙার দিকে
শুয়ে আছে ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো এককাঠা ঘেসোজমি,বহু সুদূরের জীবন বাসনা,অভীপ্সা –

নিরুত্তর দিনে / রাজেশ্বরী ষড়ংগী



শতাব্দী প্রাচীন জলে ডুবে যায় ডানা। 
এ-ক্ষয় মনের কাছে তুলে আনে মাটির পিপাসা। 

আলোরোয়া ধানে ভ্রম লিখি, 
লিখি ছায়া,গান
জটিল যা কিছু দিনলিপি। 

মনের কাছাকাছি যদি উড়ে আসে একদিন প্রভাতের নিরুত্তর হাওয়া। 

চোখে মুখে মেখে ফেলি ছেটানো কুয়াশা 

মাস আসে পুরোনো অভিসন্ধি হয়ে 
আসে বর্জ্য ও-আশা।

মুক্তি / প্রবীর চক্রবর্ত্তী

রাত্রি মুক্তি পেয়েছে প্রত্যুষে
ঠিক সেভাবেই প্রতিদিন 
চারণভূমি খুঁজে নেয় দিগন্তরেখা। 
ঘূর্ণিঝড় শক্তি বাড়িয়ে খুঁজে নেয় 
স্থলসীমান্ত, তারপর ধীরে ধীরে
হারিয়ে ফেলে আত্মপরিচয়। 
ঠিক যেভাবে আমরা প্রতিমুহূর্তে 
খুঁজে চলেছি অনন্ত আলোকর্তিকা 
মাঝে মাঝে তাকে অন্ধকার ভ্রম হয়। 

নববর্ষের প্রার্থনা / তারাশংকর দাসবৈরাগী

সূর্যটা সেই তাপে তেজে জ্বলজ্বল,
যেমনটি ছিল হাজার বছর আগে।
মাঝে বয়ে গেছে কত পল অনুপল- 
আকাশের নীল  দিগন্তে আজো জাগে।

জীবনের স্রোত বয়ে চলে অনিবার,
বৈশাখ আসে চৈত্রের চিতা ধুয়ে।
পাওয়া না-পাওয়ার অংক কষি না আর-
শুধু চেয়ে থাকি সময়ের দাঁড় ছুঁয়ে  !

তটিনীর তটে নোঙরটা থাকে বাঁধা,
স্রোতের মুখে হাঁসফাঁস কাণ্ডারী !
ঘূর্ণিতে ঘোরে হাজারো প্রশ্ন ধাঁধা-
সফল-ফসলে পূর্ণ হবে কি তরী !

নতুন আশায় স্বপ্নের জাল বুনি,
নতুন বছরে নতুন কিছু তো হবে।
বসে ভরা মনে কান পেতে আজো শুনি -
সময় ফুরোয়, ভাবি, তা আসবে কবে !

কবিতা দিয়েই শুরু হোক পথচলা -
আশার বাণীতে অমানিশা যাক টুটে।
কবির কলমে আর নয় ছলাকলা -
কবিতার ফ্রেমে জীবন উঠুক ফুটে !

রক্তকরবী / শ্রীজিৎ জানা

একলা ফেলে সবাই তখন পালিয়ে গেছে
কোপাই তীরে।
বিকেল রঙে নিঝুম সারা ভুবনডাঙা,
কতক্ষণ যে দাঁড়িয়েছিলাম অমলতাস গাছের তলায়
ঠিক মনে নেই।
ঠিক মনে নেই পালিয়ে যাওয়ার কারণ তাহার।

শুধু মুঠোর ভিতর করবী ফুল 
দিয়েছিলন যাওয়ার আগে!
সেই তো আমার পরম পাওয়া!

সবাই যখন বুক পকেটের জন্য আকুল,
বিনিদ্র রাত কাটাই শুধু প্রেমের নামে কাব্য লিখে।
সেই তো আমার পরম পাওয়া!

নইলে হয়তো মরেই যেতাম কোনদিনই। 
বুক পকেটের মধ্যে রাখি করবী ফুল,
যেমন করে আগলে রাখে রঞ্জনকে নন্দিনী…

এ পৃথিবী আমার নয় / সন্টু দত্ত

এ পৃথিবী আমার নয়
বুকে উৎকণ্ঠা চেপে ,
আমি একা একা পাড়ি দিই
জনশূন্য ক্লান্তিকর রাস্তায়,
আমার সঙ্গী আমার ছায়া
বাকি যারা ছিলো
তারা সূর্যাস্তের পূর্বে 
আমায় ফেলে চলে গেছে
এ নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা
নেই আমার মনে  
আমি চিৎকার করে ছুটে যাই
সামনের শ্মশানে , চেয়ে দেখি
কিছু নেই ,সব পুড়ে খাক হয়ে গেছে
শুধু কয়েক মুঠো ছাই ছাড়া
আমি বিস্মিত হয় । 
সেই মুহূর্তে বসে পড়ি
এটা জীবন ! পুড়ে ছাই হয়ে
যাওয়ার নাম জীবন। 
এখানে কেউ সঙ্গ দেয় না 
আবছা আলোয় সবাই ফেলে রেখে যায়।
কেউ কথা রাখেনি 
কেউ পাশে থাকেনি
কাছে ডেকে আলিঙ্গন করেনি
আমি মৃত্যুকে ভালোবাসি 
এই বার আমি ঠকবো না 
কয়েক মুঠো ছাই-এর প্রমাণ দেবে। 

শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪

বসন্তের অতিথি / বিলাস ঘোষ


কয়েকশ ক্রোশ দূরে নদীর ওপারে
বসন্ত এসেছিল রাজ বেশে
একটা কোকিল তখনও সঙ্গীহীন, অভিমানী 
কে বা কারা যেন বলেছিল তার সঙ্গী হবে 
কিন্তু, ওখানেই বন্ধ হয়েছে দক্ষিণ পাল্লা৷
উলঙ্গ শিমুলের মগডালে বসে 
সারাদিন বিলাপ করে শূন্য হৃদয়, কখনো বা রাতেও
জমে থাকা অভিমান ক্ষোভগুলি কখন যে
সর্বহারা বাউল হয়েছে তা আর বুঝে ওঠা হয়নি!
তবু বলব - অশোক, পলাশ তুমিই নিও
আমাকে নাহয় কুরচি ফুলই দিও
অভিধা না থাকুক, বসন্তের অতিথি যখন ভালো ঠিক বাসবেই

আমি আর একাকী প্রজাপতি / প্রবীর কুমার ঘোষাল


একটা মায়াময় নিশা...
একটা নির্জন ঘরে আমি আর একাকী প্রজাপতি -
আমার একলাকার ঘরে বেঁধেছে সে বাসা
রাত্রি তখন সবে দ্বিপ্রহর অতিক্রান্ত
ফুল সংগ্রহ করে শয্যায় সজ্জিতা সে 
সদ্য নিদ্রাভঙ্গ হয়ে বিছানায় বসে আমিও।
ডাগর দুই আঁখিতে তার মায়াবী নেশা -
বিরহী দৃষ্টিতে সে আমায়  কাছে পেতে চাই 
তবে সে আজ তার বর্ণময় দুই ডানা বদলেছে
তার সুগঠিত কলেবরে রেখেছে  নীলাকাশের কাছ থেকে ধার নেওয়া আমার প্রিয় নীল রং,
ঘরের কার্নিশে বসে দুই ডানা মেলে আমায় আলিঙ্গণ করার আকাঙ্খায় -
আমার প্রেয়সীর বেশে সে একটা একটা রাত্রির প্রহর গুনে চলে।
নির্জন রাত্রির ঝিঁঝিঁর ডাকে রাত আরও গভীর হয় - 
সাক্ষী থাকা মধুময় এই নির্জন রাত হয়তো আমার আর প্রজাপতির জন্য।

নদীমাতৃকা / মৌপর্ণা মুখোপাধ্যায়



নৌকাটা বহুদিন ঘাটেই পড়ে আছে।
নদী বড়ো শুকনো
বালির স্তুপ জড়ো হয়েছে নদীর বুকে।
নৌকাটির ওপরেও পলি জমে গেছে
একটা অশ্বত্থ গাছ ডালপালা মেলে উঠে দাঁড়িয়েছে
 তপ্ত দুপুরে 
একটি মেয়ে অকৃপণ ছায়ায় জড়িয়ে নিয়েছে নিজেকে
এবার সে ভিজতে চায়
কিন্তু নদী এখনও শুকনো
নদীর বুকজুড়ে গজিয়ে উঠেছে দুর্ভিক্ষের মুখ।
হোয়াংহো কিংবা ইয়াং সি কিয়াং দেখি নি কখনও
প্রয়োজন নেই
শিলাই দেখেছি, কাঁসাই দেখেছি
দেখেছি রূপনারায়ণ বা আরও অনেক নদী।
দুর্ভিক্ষের চাদর ছিঁড়ে 
নদী তুমি জননী হও।

বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৪

নিজকিয়া / সৌমিত্র চক্রবর্তী

যেতে যেতেও রেখে যেও রুক্ষ আমেজ, নগ্নদৃশ্য কিছু নরম আবেশে:
চোখ আঁকার পূর্বতন সেকেন্ডের ভগ্নাংশে আঙুলের বিচলন ছুঁয়ে যায়
সীতারামপুরের ভাড়াটে নর্তকীর অঙ্গবিভাজনের অলীক কল্পনা,
মুখ আর মুখোশের মাঝখানে ভেসে থাকে লুপ্ত আটলান্টা মহাদেশ,
এই স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলার অবসরে ভেবে নিই কি বলি তোমায়, দেখা হলে!

বকুলের আত্মজীবনী / বিদিশা সরকার



যারা বৃক্ষরোপণ করেছিল আনুষ্ঠানিক ভাবে ...
ছায়া সম্পর্কিত নাতিদীর্ঘ সুললিত ধ্বনি
তাদের আকাশে ভাসমান ফানুসের তাপাঙ্ক বিষয়ে তারাও জানেনা

কুয়োর থেকে বালতি বালতি অন্ধকার ঢেলে দিয়েছিল
অশ্বখুরাকৃতি হ্রদে
যমুনা ফিরে গিয়েছিল জলের দরে
মাধবের মোড়ে ইশারা ইঙ্গিতে
চালান হয়ে যাচ্ছিল জোছনার পথের পাঁচালি

এমন ভূয়সী অঙ্গরাগে শিউলিও শিউরে উঠেছিল
পাতায় পাতায় হিমেল নিরালা
ভাবুকের নির্জনতা শুধু একবার বিরবির করে
প্রসন্নকে বলেছিল, পরমা
উত্তাপে সর পড়লে ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিতে পারে বাগান বাড়ির ঝারবাতি
আতরের মলমে বকুলের আত্মজীবনী

সমস্ত উচ্চারণকে মন্দ্র সপ্তকে বেঁধে বেঁচে আছে বৃক্ষসম্ভবা

জোট বাঁধো হাতে হাত মিলে / মধুবসন্ত ঘোষ


আমাদের চারপাশে দেখি
ওত পেতে বসে যেন কারা,
ভাই-এ ভাই-এ দ্বন্দ্ব লাগিয়ে
আখের গুছিয়ে নেয় তারা।

আমাদের পথ কাঁটা ভরা
বিপদ ঘনিয়ে শুধু আসে,
তাই সবে সচেতন হয়ে
যেতে হবে পীচে কিবা ঘাসে।

আমাদের চারপাশে দেখি
অঘটন ঘটে চলে কত,
পৃথিবীটা শয়তানে যেন
গ্রাস করে নেয় অবিরত।

আমাদের কঠিন সময়ে
জোট বাঁধো হাতে হাত মিলে,
না হলে তলিয়ে যাবো কবে
অতল গহ্বরে তিলে তিলে।
_______________________

ডুব সাঁতারে / দেবু বন্দ্যোপাধ্যায়

স্বর্গীয় আবরণ ভিজিয়ে  দেয়
মর্ত‍্যের বৃষ্টির ফোঁটা
 আগুনে সেঁকতে গিয়ে শিহরণ
পুড়ে যায় সাজ আভরণ

সময়ের মোহনায় স্পর্শ নিতে গিয়ে
কণাগুলো মিশে যায় ঢেউয়ে
মাঝি হে জল কত গভীর 
বলে দিতে পারবে কি দাঁড়

হারিয়ে যাবার কাঙালপনায়
ক্ষতচিহ্ন রক্তের মাস্তুলে
অঙ্কুরের স্বাদ নিতে গিয়ে
ভাঙাগড়া নিজেই নিজেকে

উঠোন ডিঙানো সাহসী পৃষ্ঠায়
কেউ যদি কালি ঢেলে দেয়
প্রকাশ করতে পারবে কি
রক্তমাংসে লেখা আত্মকথা

বিলাপের গান / মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি


একটা কালো ভ্রমর বারেবারেই আমার 
কাছে এসে ঘুরপাক খাচ্ছিল
কখনো মুখের কাছে, কখনো চোখের কাছে 
কখনো কানের কাছে এসে ডানা ঝাপ্টাচ্ছিল
তাড়াতে চাইলাম, শুনল না আমার কথা
নদীর ধার ঘেঁষে একটা আকন্দ গাছ-
এগিয়ে গেলাম সেখানে 
কালো ভ্রমরটা বুঝি খুঁজে পেল মুক্তির পথ 
আমাকে ছেড়ে আকন্দের ফোটা ফুলে বসল
আমার বুকে তখন বিলাপের গান, বুঝলাম 
কিছু একটা হারিয়েছি। 

বন্ধু / সুশান্ত সৎপতি


ভবতোষ আমার বন্ধু।
অথচ সে 
সবকিছুতেই আমার বিপরীত।
আমাদের প্রেমিকারা সহোদরা।
বনকুসুম ও জ্যোৎস্নার মতো এই
সম্পর্কের মাঝে শেয়ালের ডাক কখনো কখনো ঢুকে পড়ে। জোনাকিও উঁকিঝুঁকি দেয়।

আলোর বিপরীতে / ড. বিশ্বজিৎ বাউনা


হিংসে পড়ে আছে তার বুকেরই আড়াআড়ি।
নদীর চরে একাকী কাঁপে উগ্র যাযাবর শীত।
ক্রমে ক্ষয়ের দিকে হেলে যায় ভালোবাসার বাড়ি,
ভালোবাসা জীবনের প্রয়োজনে প্রণম্য অমৃত।

দেখি রোদে ভেজা বিকেল দোল খায় পাতার কোষে,
সে আত্ম-জখম সেরে ওঠে পড়শীর ছায়া লেগে।
কার তবে চোখ লাল? মুখ ফেরানো মৌন আক্রোশে!
পাশাপাশি মৌন প্রহরে অকাম্য ভাঙচুর জেগে।

চোখে পড়েছে শ্রম? আলোর পিঠে কত ছুরি পোঁতা?
বনসাই হৃদয়ে সে শ্রমিকের মৃত হাড়গোড়?
অক্ষর ছেড়ে চলে গেছে চাঁদ, রাখেনি সমঝোতা।
জানে কত চিৎ রাতের শেষে আসে ইউরেকা ভোর?

আজ এই আধমরা খোসা উড়ে আসে মুগ্ধ ঘাসে---
কুটিল উল্লাস জড়ো হয় ছায়া হারানোর ত্রাসে।

সহজ গান / সুমিত মণ্ডল


যে সব দিনে তোমায় খুঁজি সঙ্গপণে 
বুকের ভিতর দরজা ভাঙে বিভীষণে 
একচিলতে তোমায় দেখা, সুখটুকু যে ভীষণ প্রিয় 
সেসব কথা রাজপথের এই শহর জানে।

তোমার ছবি বিজ্ঞাপনে, শহর জুড়ে 
হারিয়ে যাওয়া পথের মোড়ে যুদ্ধ করে 
তবুও আমি তোমায় খুঁজি সহজ গানে 
নরম ঘুমের চোখের স্নানে ...
সেসব কথা রাজপথের এই শহর জানে।

আঁধার বাড়ে বুকের ভিতর, তোমায় ছাড়া 
তোমার ছায়ার সঙ্গ চেয়ে দিশেহারা 
ক্লান্ত হয়েও হাজার মাইল তোমার পাশে 
শেষ ঠিকানায় খুঁজতে চাওয়া ভালবেসে। সহজ গানে 
সেসব কথা রাজপথের এই শহর জানে।

অভিমানী / নীলোৎপল জানা


হোয়াটস্যাপে চোখ রাখতে চমকে উঠলাম... 
সে আর নেই !
আকাশ যেন ভেঙে পড়ল মাথায় 
বহুবার বলেছে সে কথা--
হতাশা, বেদনা, আর যন্ত্রণা... 
বোঝা হয়নি ঠিকভাবে এত অভিমান ছিল, দুঃখ ছিল, নির্বাক স্রোতা হয়ে আমিও...

ক্ষমতার দম্ভে যে বিবেকহীন হয়ে গেল 
তাকে কে ক্ষমা করবে?
ছিঃ ক্ষমতালোভী পিশাচ তুমি অলক্ষ্যে খুন করলে।

এখন সে আনন্দে আছে 
আমি একা বেদনার বালু চরে 
সমুদ্রের ঢেউতে এই বালুচর যেন 
আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে পায়ের তলা থেকে 
সে চলে গেল অভিমানে 
অভিমানী রাধা শেষে রং খেলে ছিল 
আর অভিমানী নীলিমা সকলের অলক্ষ্যে  নীলিমায় মিশে গেল।

কাজীর বিচার কবে হবে মা / ভবেশ বসু


আমি মাঝেমধ্যে নিষিদ্ধ হয়ে যাই
আঁধারে দেহটা তুলে ধরি----পোশাক ছাড়া আমার শরীরে শোনা যায় কামনাহীন বাসনা
বেশ্যা হতে সাহস লাগে---জ্যোৎন্নার আলোকে নগ্নতাগুলি শিকারীর মতো মুখভঙ্গি
সে সময় মরে যায় প্রদীপ,গীত এবং অশ্রু
আমি মনে করতে থাকি কাল মৃত্যু কখন এসেছিল আমার এবং অন্ধত্ব
তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ি বাঘের মতো-----পুরুষ মানুষটা নিমেষেই শিব হয়ে যায়
পদতলে পড়ে থাকে শব হয়ে,একদম নিস্তব্ধ।

আমি মাঝেমধ্যে কাননের ফুল হই
তোমাদের সংবাদটি লিখে রাখি সাজির ভিতর----দেবতা কখনো দেখিনি
অশ্রু নিয়ে ঢুকে অশ্রুমোচন করবো বলে মন্ত্রপাঠ করি
তারপর একটি মানুষের জন্য মানুষ ----একটি দেবতার জন্য দেবতা
বলতে থাকি কেউ নিদ্রায় থেকো না
শব কেন হবে----এত সকালের বাগান থাকতে কেন তুমি ঝুরঝুর করে ঝরে যাও।

রাজা চাইছে নারী তুমি বেশ্যা হও
আর পুরুষ শব হয়ে শিবের পূজো নাও
পুরুষ নারী গলার মালা হলে সমাজ গন্ধ নেবে আর আতরদানিতে পিক
কেউ কি নেই বলবে,আমি উলঙ্গ প্রজা নয়----আমি আতরদানিও নয়
আমি এসেছি---বারবার আসছি---এইমাত্র এলাম আবারও 
আজ সাজির হাতে কাজীর বিচার হবে !

নির্জন দ্বীপ / গুরুপদ মুখোপাধ্যায়


নির্জন দ্বীপের নির্জলা উপবাসী অন্ধকার 
কুরেকুরে খেয়ে নিচ্ছে রাতের ঝিঁঝিঁরা
বাতাসও জানান দিয়ে গেছে রাতের রাতচরা
বৈধব্য ভেঙে উজান খুঁজছে আজকাল 
পাখিরাও নিস্তব্ধ অভিসার ভেঙে নিচ্ছে পাঠ
'যতদিন বাঁচি ততদিন শিখি'র...

এই নির্জন দ্বীপে সঙ্কেতকুঞ্জে ঘুমিয়ে পড়ে ফুলেরা
উত্তাল ঘূর্ণি নেই,তরঙ্গ আছে, ঢেউ উঠে
দুরন্ত গতি,অববাহিকায় ভাঙে চৌকাঠ 
সমুদ্রসৈকতজুড়ে বিষাদের ঘুম ভাঙায় মৎসজীবীরা
চন্দ্র কোনা তুমি কি শুধু রাজা ও মন্দিরের...

নাকি, শরীরজুড়ে একটা নির্জন দ্বীপ 
যেখানে চিতারাও ঘুম থেকে জেগে উঠে ঘুমিয়ে পড়ে 
রামকৃষ্ণ তোমার শরীরজুড়ে বল্কলেরা নেমে আসে
রাতও মাঝে মাঝে পরিযায়ী ডানা ভাসিয়ে দেয়
খুলে খুলে পড়ে তোমার ক্লান্তিময় ডাক...

ভৌগোলিক সীমারেখা / দুঃখানন্দ মণ্ডল

নদী পার হয়ে আমার ঘরে ফেরা 
ঘরময় নির্জনতা আর এক রাশ শূন্যতা 
উত্তরের জানালাটা বন্ধ… দূর থেকে শালিক পাখির ডাক শোনা যায়
দক্ষিণের জানালাটি খুলে দিয়েছি। অজানা নারীকণ্ঠ কানে ভেসে আসে
ওদের ভাষা আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি… ছুঁতে পেরেছি মন
ওরা অপেক্ষা করে প্রিয় মানুষটির ঘরে ফেরার সময়ের দিকে তাকিয়ে। 

প্রতিটি বিকেল হাতছানি দেয় ঘরে ফেরার
বৈতরণী নদী পেরিয়ে আমার ভাড়া ঘর, আমার একলা থাকার ঘর
পাখিটি রোজ অপেক্ষা করে আমার উত্তরের জানালার পাশের আমগাছে 
অনুভূতি অনুভব ও হয়তো বোঝে না… আমি জানি জানালার বিপরীত প্রান্তে শালিকটি আছে। 
.
.
.

তুমি সে দিন বলেছিলে ফিরে এসো দিনশেষে… 

তোমার হাতের তালুতে সদরদরজা চাবি দিয়ে বলেছিলাম; সাবধানে থেকেও… 

বৈতরণী নদী পেরিয়ে আমার ভাড়া ঘরে নির্জনতা বাস করে…

অবসাদ / তৌফিক হোসেন

জীবনের যেটুকু রয়েছে বাকিমৃত্যুতা,

তার‌ই জন্য বসে আছ নাকি

তবে তো মৃত্যু, তোমার বড় সাধ

নেবেই তখন, আগে নাও অবসাদ!

প্রবাসলিপি / মধুমিতা বেতাল

ও-গ্রামে কোনো মন্দির নেই, ঘর আছে।
জটায়ুর বংশধরেরা ডানা খুলে শুকোতে দেয়
চিবুক তুলে বসে থাকা বল্মীক স্তনের ওপর।

অবিশ্রান্ত বৃষ্টিধারাতেও যে-পথ চিরকাল
ফণাহীন নাগের মতোই পড়ে থাকে, তাকে
নির্বিকল্প সমাধির গল্প শোনানো বেমানান।

আমি আজও বুঝি না, ফুলের ওপর 
দেবতাদের কিসের এত রাগ-অভিমান? 
মৃত্যুর প্রতিই বা কিসেরই এত প্রেম!

বুকের একপাশে শ্মশান আর একপাশে যজ্ঞের
আয়োজন সাজিয়ে ধ্যানে বসেন বীরভদ্র,
এ-শরীরে কোনো স্বর্গ নেই, আছে সনাতন মেঘ।

আজও বুঝি না, কেন আমার দেহে আমিই প্রবাসী।

ভাঙা কোকিলের শব / সুনীল মাজি



বড়ে গুলাম আলী খানের মতো ভিটিমাটি ত্যাগ করে চলে যেতে পারি 

ওস্তাদজী বুঝেছিলেন,  ধর্মীয় মৌলবাদ তাঁর কণ্ঠ থেকে উত্তাপ কেড়ে নিতে চায় 

দাঙ্গার রক্তাক্ত রূপ তাঁর জিহ্বাকে আড়ষ্ট করছিল ক্রমশ 

একদিন মাটিকে প্রণাম  করে কালো পর্দার আড়াল উপেক্ষা করে তিনি চলে এসেছিলেন হিন্দুস্তান।

আমিও এই বঙ্গ মানচিত্র ছেড়ে চলে যেতে চাই

যেখানে সন্দেশখালির মতো ধর্ষণ নাই—যেখানে রাস্তাঘাটে ব্যভিচার নাই–

মাটি লুঠ বালি লুঠ কয়লা লুঠ ও গরুপাচার নারীপাচার নাই।

এত লুঠ আর চৌর্যবৃত্তি আগে ছিল না-–মাটি ও মানুষের চরিত্রবদল আগে এত ছিল না 

এত ঘৃণা ও অবিশ্বাস আগে ছিল না এই বাংলায় 

এত অভিনয় দেখতে দেখতে এত বহুরূপীর নাচ দেখতে দেখতে মনে হয় এই ভূমি ও ভূমা আমার নয়।

যখন তখন আমার গলার স্বর ভেঙে যাচ্ছে—চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে 

তাই এই মাটিজল ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসতে পারি, বুকে রেখো আলো।

আলতো করে পাতো কান / আমির হামজা

শব্দের বাঁকা পথ জানান দেবে গভীরতা কত শুধু একটু টোকা দাও কান পেতে শুনো —প্রতিধ্বনি সিঁথি টানা  সোনামুখি ধানগাছ —উত্তর দক্ষিণে দোলন উন্মাদ বকে...